এ এইচ সবুজ, গাজীপুর:
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের আমরাইদ বাজারের আমরাইদ পপুলার ডিজিটাল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে চিকিৎসা নিতে এসে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় মো: আলমগীর হোসেন (৩২) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নিহত মো: আলমগীর হোসেন বারিষাব ইউনিয়নের চরদুর্লভখাঁ গ্রামের নামা পাড়ার মো: আনোয়ার হোসেনের বড় ছেলে। নিহতের বাবা বারিষাব বেলতলী বাজারের তরকারী ব্যবসায়ী। পরিবারে পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে আলমগীর হোসেন ছিলেন সবার বড়। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ও এক পুত্র সন্তানের জনক। নিহতের স্ত্রী বর্তমানে চার মাসের অন্ত:সত্বা।
এলাকাবাসী ও স্বজনদের অভিযোগ, চিকিৎসকের দায়িত্বে অবহেলার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে।
নিহত আলমগীরের স্বজনেরা জানান, শুক্রবার (১৪অক্টোবর ) সকালে গলার টনসিলের অপারেশন করতে আমরাইদ পপুলার হাসপাতালে আসেন আলমগীর। যথারীতি অপারেশনও হয় কিন্তু অপারেশনের পর রক্তক্ষরণ বন্ধ না হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মারা যান আলমগীর। এ ঘটনার পর স্বজনরা তার মরদেহ নিয়ে বাড়িতে গেলে খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নাক,কান ও গলা রোগ বিষয়ে যিনি বিশেষজ্ঞ নয়, তিনি কিভাবে টনসিলের অপারেশন করেন? এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মামুনুর রহমান বলেন, এমন ঘটনা অনাকাঙ্খিত। তাকে অবশ্যই নাক,কান ও গলা রোগ (ইএনটি) বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হতে হবে। অন্যথায় কোন ভাবেই তিনি অপারেশন করতে পারেন না।
তিনি আরো বলেন, এমন ঘটনা অনাকাঙ্খিত। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।
আমরাইদ পপুলার হাসপাতালের পূর্ব নাম ছিলো ‘সেবা হাসপাতাল’। পূর্বেও এ রকম ঘটনার কারনে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিলো এই হাসপাতাল। কিছুদিন পূর্বে সেবা হাসপাতার এন্ড ডায়াগনোস্টিক সেন্টার এর নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ করা হয়-আমরাইদ পপুলার ডিজিটাল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনোস্টিক সেন্টার। এই হাসপাতালের মালিক আবুল হোসেন বলেন, আমি তো ডাক্তার নই! অপারেশন করেছে ডাক্তার, আপনারা ডাক্তারের সাথে কথা বলেন।
এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাশ করা ডা: এ টি এম ফয়সাল রহমানের ব্যবহৃত মুঠোফোনে ফোন দিলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে স্বজনরা অভিযোগ করে আরো বলেন, ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার কারণে আলমগীর মারা গেছে। এলাকার লোকজন মানুষের জীবন হরণকারী এই হাসপাতাল বন্ধ করার দাবী জানান।
এ বিষয়ে বারিষাব ইউপি চেয়ারম্যান এস এম আতাউজ্জামান বাবলু বলেন, পরিবারের লোকজনের অভিযোগ ভুল চিকিৎসায় আলমগীরের মৃত্যু হয়েছে। আর এ বিষয়টি আমার দেখার কোন সুযোগ নেই। এ বিষয়টি সম্পূর্ণ আইন ও স্বাস্থ্য বিভাগ দেখবে।
তিনি আরো বলেন, যদি ঘটনা সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে অভিযুক্ত ডাক্তার এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উপযুক্ত শাস্তি দাবী করছি।
বিষয়টি নিয়ে কাপাসিয়া থানার (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) ওসি এএফএম নাসিম বলেন,মরদেহ নিয়ে স্বজনরা বিক্ষোভ করলে আমরা পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। এখন পর্যন্ত মৃতের স্বজনরা থানায় অভিযোগ করেননি অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এখনো ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।
মৃত ব্যক্তিকে দেয়া সংশ্লিষ্ট অপারেশনকারী ডাক্তারের দেয়া প্রেসক্রিপশন |